• বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

রাজনগরের তারাপাশা বালুমহালে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে ভারী ট্রাক-লরি, দুর্ভোগে এলাকার ৫০ হাজার মানুষ

  • ''
  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০২৪

মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি:

চরম দুর্ভোগে রয়েছেন রাজনগর উপজেলার টেংরা-তারাপাশা সহ আরো দুই উপজেলার এলাকাবাসী । তারাপাশা বালুমহালে চলাচল করা ২০ থেকে ৩০ টন ওজনের ভারী ট্রাক- লরির কারণে সড়কে হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন রাজনগর, কমলগঞ্জ-কুলাউড়ার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। অন্যদিকে বালুমহাল থেকে সরকারের প্রাপ্ত রাজস্বের তুলনায় প্রায় সাত গুণ বেশি খরচ হয় রাস্তাটি সংস্কারে, বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি গুনতে হয় সরকারকে । তাই অনতিবিলম্বে বালুমহালটি বন্ধ করে সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।

সড়কটি দৈনন্দিন প্রয়োজনে মূলত ব্যবহার করেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার কামারচাক, কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ও কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের মানুষ । বলা যায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় তিনটি উপজেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম সড়কের একটি হচ্ছে এই টেংরা- দেওয়ানদীঘি-তারাপাশা সড়ক ।

ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অভিযুগের সূত্র ধরে সরজমিনে যেয়ে দেখা যায়, সড়কটি চরম মাত্রায় খারাপ অবস্থা ধারণ করেছে । তারাপাশা বালুমহাল থেকে প্রতিদিন বালু বোঝাই ২০ থেকে ৩০ টন ওজনের ভারি লরি ও ট্রাক চলাচল করার ফলে টেংরা ইউনিয়নের করতল থেকে কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ ও বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলা সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। গর্তগুলো পানিতে ভরে থাকে। এসব গর্তে প্রায় গাড়ির চাকা আটকে বেহাল দশা সৃষ্টি হয়। তারমধ্যে চরম বাজে অবস্থা তারাপাশা বাজার সড়কটির । রাজনগর, মৌলভীবাজার, টেংরা, তারাপাশা, শমসেরনগর, পতনউষার, কাউকাপন, করাইয়া, মৌলভীচকসহ অসংখ্য ছোট-বড় গাড়ি চলে এই সড়কটি দিয়ে । এলাকাবাসীর অভিযোগ আধভাঙ্গা এই রাস্তাটি সংস্কারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নেই কোন কার্যকরী উদ্যোগ ।

রাস্তাটির ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় মাইক্রোবাস চালক আশরাফ আলী বলেন " তারাপাশা তাকি টেংরা যাওয়ার ফতে যাত্রীরা কি কষ্ট পায়, আল্লাহ ছাড়া কেউ ত তো কেউ জানে না, রাস্তার অবস্থা খুঊব খারাপ, বড় বড় বালুর গাড়ি রাস্তার বারোটা বাজাইছে, অথচ কষ্ট পাচ্ছি আমরা" ।

'বড় বড় বালুর ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি ভেঙে গেছে, গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয়, এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না' বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সিএনজি অটো রিকশা চালক হামিদ ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, টেংরা-দেওয়ানদীঘি-তারাপাশা সড়কের দেওয়ানদীঘি-পালপু প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের জন্য টেন্ডার অনুমোদন হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর নতুন করে মনু নদীর তারাপাশা বালুমহালটি ইজারা দেওয়া হবে। বালুমহাল থেকে সরকার রাজস্ব পায় ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ।

বালু নিয়ে আসা ট্রাকচালক কাশেম মিয়া বলেন, 'এখান থেকে বালু নিয়ে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাই, কমবেশি প্রায় ৫০-৬০টি গাড়ি রাতে চলাচল করে, বালু নিতে হলে তো রাস্তা কিছুটা ভাঙবেই, এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই' ।
সড়কটিতে ভারি যানবাহন চলাচল করার কারণে সৃষ্ট জনদুর্ভোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা বলেন, ' শিগগিরই সংস্কার কাজ শুরু হবে, ইতিমধ্যে রাস্তাটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে । যেহেতু এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক , সংস্কারের পর রাস্তাটি যাতে ভালো থাকে আমরা সে ব্যবস্থা নেব।

মৌলভীবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ বলেন, রাস্তাটির টেন্ডার কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। এ রাস্তা দিয়ে বালুবোঝাই যানবাহন চলাচলের যে অভিযোগ আছে, তা নিয়ে এলাকাবাসীকেই সোচ্চার হতে হবে।

এলাকাবাসীরা মনে করেন,বালুমহালে আসা- যাওয়া করা ভারী যানবাহনের কারণে ভেঙে যাওয়া সড়ক মেরামত করতে ব্যয় হচ্ছে ১২ কোটি টাকা, আর তারাপাশা বালুমহাল থেকে সরকার বছরে রাজস্ব আয় করছে মাত্র দেড় কোটি টাকা । তাই সরকারি ব্যয় ও জনদুর্ভোগ কমাতে বালুমহালটি বন্ধের পক্ষেই তাদের দাবি ।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম জানান, 'বালুমহালের ইজারা প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ করেই বালুমহাল বন্ধ করা যাবে না, আমরা বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে পাঠাব এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। তবে ওভারলোডেড কোনো ট্রাক যেন এই সড়কে চলাচল না করে, সেটা আমরা দেখব'।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads